২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজছেন মো. তুষার নামের এক যুবক। পছন্দমত পাত্রী না পাওয়ায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ২০১৯ এ আর বিয়ে নয়। মেয়ে দেখাও নয়। ২০২০ সালে এসে বিয়ে করবেন বলে মনস্থির করে নিজের ব্যবসায়ীক কাজে মনোযোগ দেন। ২০২০ সালের শুরুতে আবার মেয়ে দেখা শুরু করেন। বিভিন্ন স্থানে ঘটকের সঙ্গে চলতে থাকে আলাপ আলোচনা, মেয়ে দেখতে যাওয়া। ঘটক ও আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে খোঁজ-খবর নিতে নিতে সময় গড়িয়ে যায়। তাড়াহুড়া করেননি। ইচ্ছে ছিল ধীরে-সুস্থ, দেখে-শুনে বিয়ে করবেন।
মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে নিতেই করোনা এসে হাজির হয় দেশে। ধীরে ধীরে থমকে যেতে থাকে সবকিছু। করোনা আতঙ্কে মাথা থেকে বিয়ের চিন্তাও বাদ দিতে হয় তাকে।
ভেবেছিলেন করোনা থেমে গেলে ঈদের পরে কোনো এক ব্যবস্থা করে ফেলবেন, কিন্তু করোনা সংকট আরো ঘণীভূত হওয়ায় মাথা থেকে বিয়ের ভাবনাই বাদ দিতে হয়েছে তাকে।
আলাপচারিতায় মাদারীপুরের এই যুবক জানান, করোনার কারণে বিয়ে থমকে আছে। পরিবারের সদস্যরা উদ্বিগ্ন বয়স বেড়ে যাচ্ছে। করোনা সংকট কবে কাটবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আর এই অবস্থার মধ্যে বিয়ে ঠিক করাটাও কষ্টকর।
এই যুবকের মতো আরো অনেক যুবকরা করোনার কারণে বিয়ে করতে পারছেন না বলে জানা গেছে। এ পরিস্থিতিতে পাত্রী দেখাও বন্ধ অনেকের। একই সমস্যায় পড়েছেন বিবাহযোগ্য মেয়ের পরিবারও। করোনার কারণে মাদারীপুর জেলায় তৃতীয় দফার লকডাউন ও প্রতিদিনই করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিবাহযোগ্য ছেলে-মেয়ের পরিবার বিবাহ-কার্যক্রমে যেতে পারছে না। ফলে যুবক ও তরুণীদের পরিবার এক প্রকার বিবাহ-সংকটে রয়েছে বলে জানায় স্থানীয়রা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত মার্চের শেষ সপ্তাহে দেশের প্রথম লকডাউনকৃত এলাকা ঘোষণা করা হয় মাদারীপুর জেলার শিবচরকে। এরপর ধাপে ধাপে মাদারীপুর জেলাও লকডাউনের আওতায় আসে। দিনে দিনে রোগী বাড়তে থাকায় দেশের প্রায় সব স্থানেই জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ে। বর্তমানে চলতি মাসেও দেশে অঞ্চলভিত্তিক লকডাউন চলছে।
রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপন ব্যাহত হচ্ছে। কর্ম সংকটেও পড়েছে একটি শ্রেণি। সংকটাপন্ন এ সময়ে অনেকটাই থমকে আছে বিয়ে-শাদি। অবাধ চলাফেরা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পাত্র-পাত্রী দেখাও অনেকটাই বন্ধ রয়েছে। অনেক যুবকেরা অপেক্ষায় রয়েছেন করোনা সংকট কেটে যাওয়ার।
তবে এই সংকটের মধ্যেও জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘরোয়া পরিবেশে বিয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে উভয় পরিবার কয়েকজন লোক একত্রিত হয়ে অনেকটা গোপনীয়ভাবে বিয়ের কার্যক্রম সম্পন্ন করছেন। তবে এর সংখ্যা হাতেগোনা।
জেলার শিবচর উপজেলার একটি কাজী অফিস সূত্র জানিয়েছে, উপজেলায় করোনার এ সময়ে বিয়ে-শাদি নেই বললেই চলে। দুই/একটা বিয়ে হলেও তা লোক সমাগম ছাড়া অনেকটা নীরবেই হয়ে থাকে। অন্যান্য সময়ে মাসে ৮/১০টি বিয়ে থাকলেও গত তিন মাসে তা প্রায় শূন্যের কোঠায়।
মো. শাওন হাওলাদার। গণপূর্ত বিভাগের উপ সহকারী প্রকৌশলী। বর্তমানে মাদারীপুরে কর্মরত। তিনি বলেন, আসলে বর্তমানে করোনার কারণে অনেক যুবকেরই বিয়ে আটকে আছে। আমার ইচ্ছা ছিল এ বছরের প্রথম দিকেই বিয়ে করার। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তা মনে হচ্ছে সম্ভব হবে না। তাছাড়া ধুম-ধাম করে বিয়ের অনুষ্ঠানেরও কোনো সুযোগ নেই। আর করোনার এই ক্রান্তিকালে মানুষ জীবন-জীবিকা নিয়ে বেশি ভাবছে। সেক্ষেত্রে বিয়েটা পিছিয়ে যাচ্ছে।
বিয়ে মানুষের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে পরিবার থেকে বিয়ের চাপ আসে যুবক-তরুণীদের। স্বচ্ছল বেশির ভাগ পরিবারই সন্তানদের বিয়ে নিয়ে রঙিন স্বপ্ন দেখে। ধুম-ধাম করে বিয়ের অনুষ্ঠান করবে। আবার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখারও একটা প্রস্তুতি রয়েছে। সব মিলিয়ে এই প্রক্রিয়া কিছুটা সময় সাপেক্ষ বিষয়। কিন্তু করোনার এই সংকট মুহূর্তে থমকে গেছে বিয়ে, বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। অনেকে আবার গোপনে সেড়ে নিচ্ছেন কাবিনসহ বিয়ের কাজ।
তবে যুবকদের একটা বড় অংশ যারা পারিবারিক পছন্দে বিয়ে করবেন তাদের পাত্রী পছন্দের আনুষঙ্গিক সব কার্যক্রমই থেমে আছে করোনার কারণে। করোনা ছন্দপতন ঘটিয়েছে বিবাহযোগ্য নারী-পুরুষের চিন্তা-চেতনায়। বিপাকে থাকা অনেক পরিবারের অপেক্ষা শিগগিরই এই সংকট শেষ হবে, শুরু হবে নতুন দিন।